ঢাকা ০৮:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রপ্তানির জন্য বড় ধাক্কা, রোববার জরুরি বৈঠক

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১১:৪৮:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫ ৩৯ বার পড়া হয়েছে

পোশাক রপ্তানি

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক (Reciprocal Tariff) আরোপ করায় দেশের অর্থনীতি ও রপ্তানি খাতের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব পর্যালোচনায় আসছে রোববার (৬ এপ্রিল) এক জরুরি বৈঠক। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা, অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান এবং ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

ঈদের ছুটির কারণে বৈঠকটি বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। ছুটি শেষে অফিস শুরুর দিনেই এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক ব্যবস্থা উদ্বেগজনক। এতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ প্রধান রপ্তানি খাতগুলো বড় ধাক্কা খেতে পারে।”

রপ্তানির জন্য বড় ধাক্কা
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক থাকলেও, নতুন সিদ্ধান্তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল হবে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১০.১৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৭.৫৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, এবং আমদানি করেছে ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য।

এই রপ্তানির মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকেই এসেছে ৭.৪৩ বিলিয়ন ডলার। বাকি অংশ এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়ার জুতা, ওষুধ, কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য খাত থেকে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির চিত্র
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে লোহা ও ইস্পাত (৬০১.৪ মিলিয়ন ডলার), খনিজ জ্বালানি (৫৯৫.২ মিলিয়ন ডলার), তুলা (৩৬১ মিলিয়ন ডলার), তেলবীজ (৩৪১ মিলিয়ন ডলার), এবং নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর ও যন্ত্রপাতি (১১১ মিলিয়ন ডলার)।

বহির্বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা বলে উল্লেখ করেছে। অস্ট্রেলিয়া বলেছে, এটি “বন্ধুসুলভ নয়।” যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, “এই সিদ্ধান্তের অর্থনৈতিক প্রভাব অনস্বীকার্য।” চীন বলেছে, তারা পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাবে, অর্থাৎ বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ছিল ৯৭০১ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, আমদানি ২৩৪৪ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি ১০৪১৭ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২৮২৫ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি ৬৯৭৪ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২২৬৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৮৩২ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২১২৬ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৬৮৭৬ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ১৭৭৩ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৯৮৩ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ১৭০৪ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বেশি হলেও, নতুন শুল্কে এই প্রবণতা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

One thought on “রপ্তানির জন্য বড় ধাক্কা, রোববার জরুরি বৈঠক

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রপ্তানির জন্য বড় ধাক্কা, রোববার জরুরি বৈঠক

আপডেট সময় : ১১:৪৮:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক (Reciprocal Tariff) আরোপ করায় দেশের অর্থনীতি ও রপ্তানি খাতের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব পর্যালোচনায় আসছে রোববার (৬ এপ্রিল) এক জরুরি বৈঠক। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা, অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান এবং ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

ঈদের ছুটির কারণে বৈঠকটি বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। ছুটি শেষে অফিস শুরুর দিনেই এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক ব্যবস্থা উদ্বেগজনক। এতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ প্রধান রপ্তানি খাতগুলো বড় ধাক্কা খেতে পারে।”

রপ্তানির জন্য বড় ধাক্কা
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক থাকলেও, নতুন সিদ্ধান্তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল হবে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১০.১৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৭.৫৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, এবং আমদানি করেছে ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য।

এই রপ্তানির মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকেই এসেছে ৭.৪৩ বিলিয়ন ডলার। বাকি অংশ এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়ার জুতা, ওষুধ, কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য খাত থেকে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির চিত্র
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে লোহা ও ইস্পাত (৬০১.৪ মিলিয়ন ডলার), খনিজ জ্বালানি (৫৯৫.২ মিলিয়ন ডলার), তুলা (৩৬১ মিলিয়ন ডলার), তেলবীজ (৩৪১ মিলিয়ন ডলার), এবং নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর ও যন্ত্রপাতি (১১১ মিলিয়ন ডলার)।

বহির্বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা বলে উল্লেখ করেছে। অস্ট্রেলিয়া বলেছে, এটি “বন্ধুসুলভ নয়।” যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, “এই সিদ্ধান্তের অর্থনৈতিক প্রভাব অনস্বীকার্য।” চীন বলেছে, তারা পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাবে, অর্থাৎ বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ছিল ৯৭০১ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, আমদানি ২৩৪৪ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি ১০৪১৭ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২৮২৫ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি ৬৯৭৪ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২২৬৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৮৩২ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২১২৬ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৬৮৭৬ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ১৭৭৩ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৯৮৩ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ১৭০৪ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বেশি হলেও, নতুন শুল্কে এই প্রবণতা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।