ড. ইউনূস -মোদির বৈঠক শুরু

- আপডেট সময় : ১২:৩৩:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫ ২৫ বার পড়া হয়েছে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু হয়েছে। শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ১০ মিনিটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. ইউনূসের সঙ্গে মোদির প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
এর আগের দিন, বৃহস্পতিবার ৩ এপ্রিল, সম্মেলনের নৈশভোজে দুই নেতার সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ হয় এবং সৌজন্য বিনিময় করেন। ওই নৈশভোজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট, নেপালের প্রধানমন্ত্রীসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেগুলোর বেশিরভাগই দূর থেকে তোলা। এসব ছবি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করেন এবং ক্যাপশনে লেখেন, “ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে।”
দুই দিনের সফরে থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন ড. ইউনূস। ব্যাংককে ২ এপ্রিল শুরু হওয়া বিমসটেক সম্মেলন ৪ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করাই তার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তিনি উল্লেখ করেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করবে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেমন জনগণ নৃশংস সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, তেমনি চলতি বছরের জুলাই মাসে আবারও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ এক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। তিনি জানান, এই সংগ্রামে প্রায় ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই তরুণ এবং ১১৮ জন শিশু।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ আজ এক নবজাগরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতার পুনঃপ্রতিষ্ঠাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।” তিনি আরও বলেন, ছাত্রনেতাদের অনুরোধেই তিনি এই সংকটকালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণে সম্মত হন।
ড. ইউনূস সরকারের লক্ষ্য নিয়ে বলেন, “আমরা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি জানান, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে, যেগুলো ইতোমধ্যেই সুপারিশ পেশ করেছে।
এই সুপারিশগুলো পর্যালোচনার জন্য ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ড. ইউনূস নিজে এবং কমিশনের বাকি সদস্যরা হচ্ছেন ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রধানরা।
এছাড়াও তিনি জানান, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম এবং নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতে আরও চারটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। ড. ইউনূস বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়তে চাই, যেখানে প্রতিটি নাগরিক—হোক সে নারী, সংখ্যালঘু কিংবা প্রান্তিক—তার সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করতে পারে।”
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এবং বিমসটেক সম্মেলনের চেয়ারপার্সন পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা, বিমসটেক মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ইন্দ্র মনি পান্ডে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদলের প্রধানরা।