মিয়ানমারের বন্দি শিবির থেকে মুক্ত ১৯ বাংলাদেশি

- আপডেট সময় : ০১:৩৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ ৫৪ বার পড়া হয়েছে

অতিরিক্ত অর্থ আয়ের প্রলোভনে কিছু বাংলাদেশি মানব পাচারকারীর শিকার হয়ে দুবাই থেকে থাইল্যান্ড যাওয়ার চেষ্টা করেন। মানব পাচারকারীরা তাদের থাইল্যান্ডে নেওয়ার কথা বলে মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তের মায়াওয়াডি-মেসোট অঞ্চলের বন্দি শিবিরে নিয়ে যায়। তবে অবশেষে, মিয়ানমারের বন্দি শিবিরে আটকে পড়া ১৯ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাহায্যে ইয়াঙ্গুন এবং ব্যাংকক থেকে তাদের মুক্ত করা হয়। মুক্তি পাওয়া এসব বাংলাদেশিকে থাইল্যান্ডে নেওয়া হয়েছে এবং আজ রাতেই তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত অর্থ কামানোর লোভে কিছু বাংলাদেশি দুবাই থেকে থাইল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু মানব পাচারকারীরা তাদের মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তের মায়াওয়াডি-মেসোট অঞ্চলের বন্দি শিবিরে নিয়ে যায়। এসব বন্দি শিবিরগুলো মূলত মিয়ানমারে অবস্থিত, যেখানে প্রায় ৩০টি শিবির রয়েছে। থাইল্যান্ড-মিয়ানমার যৌথ বাহিনী সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বন্দি শিবির গুড়িয়ে দিয়েছে।
এই বন্দি শিবিরগুলোতে আইটি খাতের মানুষের অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের প্রলোভনে পাচার করা হয়। সেখানে জোরপূর্বক কাজ করানো হয় এবং কোনো টার্গেট পূরণ করতে না পারলে নির্যাতন করা হয়। বন্দি শিবিরের এলাকা থেকে কাউকে বাইরে যেতে দেওয়া হয় না।
সূত্র জানায়, এই ১৯ বাংলাদেশি নাগরিকের উদ্ধার করা হয়েছে, যার ফলে মিয়ানমারের বন্দি শিবির থেকে মোট ২২ জন বাংলাদেশিকে মুক্ত করা সম্ভব হলো। এর আগে এক বাংলাদেশি পালিয়ে ইয়াঙ্গুনে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং তার মাধ্যমে বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি জানতে পারে। ওই বাংলাদেশি এক মাস ইয়াঙ্গুনে আশ্রয়ে থাকার পর কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় দেশে ফেরেন। এরপর বাংলাদেশ দূতাবাস মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্য বাংলাদেশিদের উদ্ধার করতে সহযোগিতা চায়।
মিয়ানমার সরকারও বাংলাদেশিদের উদ্ধারে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। তবে, মিয়ানমারের মায়াওয়াডি-মেসোট অঞ্চল একটি স্পর্শকাতর এলাকা হওয়ায়, বাইরের কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তবে, থাইল্যান্ড সরকারের সহায়তায় এই ১৯ বাংলাদেশিকে মিয়ানমার থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয় এবং ব্যাংককে পাঠানো হয়।
এছাড়াও, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এসব বন্দি শিবির থেকে চীনের প্রায় ৬ হাজার, ইন্দোনেশিয়ার ৪০০ জন এবং ভারতের ২৮৫ জন নাগরিককে উদ্ধার করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি, ভিয়েতনাম ও হংকংয়ে চাকরির প্রলোভনে গিয়ে অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কূটনীতিকরা দেশবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন যে, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড বা ইন্দোনেশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রস্তাব পেলে তা যাচাই করে তবেই গমন করা উচিত।
এক কূটনীতিক জানান, মানব পাচারের এই নতুন রুটে বেশ কিছু বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ান কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়েছেন এবং দেশে ফিরে এসেছেন। এছাড়া, নকল নাবিক লাইসেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন দেশে পাচারের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি ৪১ জন বাংলাদেশি ইরানে পাঠানো হয়েছে। এমনকি কিছু দালাল চক্র ওমরাহ ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশিদের সৌদি আরবে নিয়ে অবৈধ কাজে নিযুক্ত করছে বা ভিজিট ভিসায় রাশিয়া নিয়ে গিয়ে তাদের ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠাচ্ছে। কূটনীতিকরা পরামর্শ দিয়েছেন, অতিরিক্ত অর্থের লোভ সামলে সঠিক নিয়ম মেনে বিদেশ যাওয়ার জন্য।