ঢাকা ১১:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনশক্তি লুটেরাদের অর্থ আত্মসাতের রেকর্ড

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১১:৪২:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ ৩৭ বার পড়া হয়েছে

জনশক্তি লুটেরাদের অর্থ আত্মসাতের রেকর্ড

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি (কর্মী পাঠানো)’র নামে ১,১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নতুন রেকর্ড করেছে লুটেরাদের দল। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) ও তার পরিবারের সদস্যরা, সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদসহ ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের আসামি করা হয়েছে।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ জন মালিক-কর্মকর্তা সরকার নির্ধারিত ৭৮,৯৯০ টাকার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ আদায় করেছেন। ৬৭,৩৮০ জন প্রবাসীর কাছ থেকে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি ও ব্যক্তিরা:

মেসার্স ওরবিটাল এন্টারপ্রাইজ:

৬,০২৯ জন কর্মীর কাছ থেকে ১০০.৯৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: কাশমিরি কামাল (সাবেক অর্থমন্ত্রীর স্ত্রী)
আসামি: কাশমিরি কামাল, মুস্তফা কামাল

মেসার্স ওরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল:

২,৯৯৫ জন কর্মীর কাছ থেকে ৫০.১৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: নাফিসা কামাল (সাবেক অর্থমন্ত্রীর মেয়ে)
আসামি: নাফিসা কামাল, মুস্তফা কামাল

স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড:

৬,৬৫৭ জন কর্মীর কাছ থেকে ১১১.৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: নিজাম উদ্দিন হাজারী (সাবেক এমপি), তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম, শেখ আবদুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম, এম আমিরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া

বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল:

৫,৪৫৮ জন কর্মীর কাছ থেকে ৯১.৪২ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: আবদুস সোবহান ভূঁইয়া (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান), তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তার

ফাইভএম ইন্টারন্যাশনাল:

৭,১২৪ জন কর্মীর কাছ থেকে ১১৯.৩২ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (সাবেক এমপি, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল), নূর মোহাম্মদ আবদুল মুকিত, মেহবুবা আফতাব সাথি, তাসনিয়া মাসুদ (মাসুদ উদ্দিনের মেয়ে)

মেসার্স ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড:

৩,৭৮৮ জন কর্মীর কাছ থেকে ৬৩.৪৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মোহা. নুর আলী, তার স্ত্রী সেলিনা আলী, মেয়ে নাবিলা আলী, নাছির উদ্দিন আহমেদ, খোন্দকার শওকত হোসেন (সাবেক সচিব)

ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড:

৭,৭৮৭ জন কর্মীর কাছ থেকে ১৩০.৪৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মোহাম্মদ রুহুল আমিন, তার স্ত্রী লুৎফুর নেছা শেলী

মেসার্স আহমদ ইন্টারন্যাশনাল:

৮,৫৯২ জন কর্মীর কাছ থেকে ১৪৩.৯১ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: বেনজীর আহমেদ (সাবেক এমপি)

বিএম ট্রাভেলস লিমিটেড:

৮,০৯৩ জন কর্মীর কাছ থেকে ১৩৫.৫৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: শফিকুল ইসলাম (সাবেক কাউন্সিলর), তার স্ত্রী মৌসুমি আক্তার

বিএনএস ওভারসিজ লিমিটেড:

৪,২১৫ জন কর্মীর কাছ থেকে ৭০.৬০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: ইশতিয়াক আহমেদ সৈকত (যুবলীগ নেতা), তার স্ত্রী নসরুন নেছা

রুবেল বাংলাদেশ লিমিটেড:

২,৮৪৫ জন কর্মীর কাছ থেকে ৪৭.৬৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মুহাম্মদ মজিবুল হক রুবেল, তার স্ত্রী কামরুন নাহার হীরামনি

দি ইফতী ওভারসিজ:
৩,৭৯৭ জন কর্মীর কাছ থেকে ৬৩.৫৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মো. রুবেল, বোরহান উদ্দিন পান্না

দুদক জানিয়েছে, এসব রিক্রুটিং এজেন্সি নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আদায় করে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মামলার তদন্ত চলছে, এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনশক্তি লুটেরাদের অর্থ আত্মসাতের রেকর্ড

আপডেট সময় : ১১:৪২:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি (কর্মী পাঠানো)’র নামে ১,১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নতুন রেকর্ড করেছে লুটেরাদের দল। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) ও তার পরিবারের সদস্যরা, সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদসহ ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের আসামি করা হয়েছে।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ জন মালিক-কর্মকর্তা সরকার নির্ধারিত ৭৮,৯৯০ টাকার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ আদায় করেছেন। ৬৭,৩৮০ জন প্রবাসীর কাছ থেকে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি ও ব্যক্তিরা:

মেসার্স ওরবিটাল এন্টারপ্রাইজ:

৬,০২৯ জন কর্মীর কাছ থেকে ১০০.৯৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: কাশমিরি কামাল (সাবেক অর্থমন্ত্রীর স্ত্রী)
আসামি: কাশমিরি কামাল, মুস্তফা কামাল

মেসার্স ওরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল:

২,৯৯৫ জন কর্মীর কাছ থেকে ৫০.১৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: নাফিসা কামাল (সাবেক অর্থমন্ত্রীর মেয়ে)
আসামি: নাফিসা কামাল, মুস্তফা কামাল

স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড:

৬,৬৫৭ জন কর্মীর কাছ থেকে ১১১.৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: নিজাম উদ্দিন হাজারী (সাবেক এমপি), তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম, শেখ আবদুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম, এম আমিরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া

বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল:

৫,৪৫৮ জন কর্মীর কাছ থেকে ৯১.৪২ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: আবদুস সোবহান ভূঁইয়া (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান), তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তার

ফাইভএম ইন্টারন্যাশনাল:

৭,১২৪ জন কর্মীর কাছ থেকে ১১৯.৩২ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (সাবেক এমপি, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল), নূর মোহাম্মদ আবদুল মুকিত, মেহবুবা আফতাব সাথি, তাসনিয়া মাসুদ (মাসুদ উদ্দিনের মেয়ে)

মেসার্স ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড:

৩,৭৮৮ জন কর্মীর কাছ থেকে ৬৩.৪৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মোহা. নুর আলী, তার স্ত্রী সেলিনা আলী, মেয়ে নাবিলা আলী, নাছির উদ্দিন আহমেদ, খোন্দকার শওকত হোসেন (সাবেক সচিব)

ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড:

৭,৭৮৭ জন কর্মীর কাছ থেকে ১৩০.৪৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মোহাম্মদ রুহুল আমিন, তার স্ত্রী লুৎফুর নেছা শেলী

মেসার্স আহমদ ইন্টারন্যাশনাল:

৮,৫৯২ জন কর্মীর কাছ থেকে ১৪৩.৯১ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: বেনজীর আহমেদ (সাবেক এমপি)

বিএম ট্রাভেলস লিমিটেড:

৮,০৯৩ জন কর্মীর কাছ থেকে ১৩৫.৫৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: শফিকুল ইসলাম (সাবেক কাউন্সিলর), তার স্ত্রী মৌসুমি আক্তার

বিএনএস ওভারসিজ লিমিটেড:

৪,২১৫ জন কর্মীর কাছ থেকে ৭০.৬০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: ইশতিয়াক আহমেদ সৈকত (যুবলীগ নেতা), তার স্ত্রী নসরুন নেছা

রুবেল বাংলাদেশ লিমিটেড:

২,৮৪৫ জন কর্মীর কাছ থেকে ৪৭.৬৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মুহাম্মদ মজিবুল হক রুবেল, তার স্ত্রী কামরুন নাহার হীরামনি

দি ইফতী ওভারসিজ:
৩,৭৯৭ জন কর্মীর কাছ থেকে ৬৩.৫৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মো. রুবেল, বোরহান উদ্দিন পান্না

দুদক জানিয়েছে, এসব রিক্রুটিং এজেন্সি নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আদায় করে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মামলার তদন্ত চলছে, এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।