জনশক্তি লুটেরাদের অর্থ আত্মসাতের রেকর্ড

- আপডেট সময় : ১১:৪২:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ ৩৭ বার পড়া হয়েছে

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি (কর্মী পাঠানো)’র নামে ১,১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নতুন রেকর্ড করেছে লুটেরাদের দল। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) ও তার পরিবারের সদস্যরা, সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদসহ ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের আসামি করা হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ জন মালিক-কর্মকর্তা সরকার নির্ধারিত ৭৮,৯৯০ টাকার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ আদায় করেছেন। ৬৭,৩৮০ জন প্রবাসীর কাছ থেকে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি ও ব্যক্তিরা:
মেসার্স ওরবিটাল এন্টারপ্রাইজ:
৬,০২৯ জন কর্মীর কাছ থেকে ১০০.৯৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: কাশমিরি কামাল (সাবেক অর্থমন্ত্রীর স্ত্রী)
আসামি: কাশমিরি কামাল, মুস্তফা কামাল
মেসার্স ওরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল:
২,৯৯৫ জন কর্মীর কাছ থেকে ৫০.১৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: নাফিসা কামাল (সাবেক অর্থমন্ত্রীর মেয়ে)
আসামি: নাফিসা কামাল, মুস্তফা কামাল
স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড:
৬,৬৫৭ জন কর্মীর কাছ থেকে ১১১.৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: নিজাম উদ্দিন হাজারী (সাবেক এমপি), তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম, শেখ আবদুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম, এম আমিরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া
বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল:
৫,৪৫৮ জন কর্মীর কাছ থেকে ৯১.৪২ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: আবদুস সোবহান ভূঁইয়া (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান), তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তার
ফাইভএম ইন্টারন্যাশনাল:
৭,১২৪ জন কর্মীর কাছ থেকে ১১৯.৩২ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (সাবেক এমপি, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল), নূর মোহাম্মদ আবদুল মুকিত, মেহবুবা আফতাব সাথি, তাসনিয়া মাসুদ (মাসুদ উদ্দিনের মেয়ে)
মেসার্স ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড:
৩,৭৮৮ জন কর্মীর কাছ থেকে ৬৩.৪৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মোহা. নুর আলী, তার স্ত্রী সেলিনা আলী, মেয়ে নাবিলা আলী, নাছির উদ্দিন আহমেদ, খোন্দকার শওকত হোসেন (সাবেক সচিব)
ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড:
৭,৭৮৭ জন কর্মীর কাছ থেকে ১৩০.৪৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মোহাম্মদ রুহুল আমিন, তার স্ত্রী লুৎফুর নেছা শেলী
মেসার্স আহমদ ইন্টারন্যাশনাল:
৮,৫৯২ জন কর্মীর কাছ থেকে ১৪৩.৯১ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: বেনজীর আহমেদ (সাবেক এমপি)
বিএম ট্রাভেলস লিমিটেড:
৮,০৯৩ জন কর্মীর কাছ থেকে ১৩৫.৫৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: শফিকুল ইসলাম (সাবেক কাউন্সিলর), তার স্ত্রী মৌসুমি আক্তার
বিএনএস ওভারসিজ লিমিটেড:
৪,২১৫ জন কর্মীর কাছ থেকে ৭০.৬০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: ইশতিয়াক আহমেদ সৈকত (যুবলীগ নেতা), তার স্ত্রী নসরুন নেছা
রুবেল বাংলাদেশ লিমিটেড:
২,৮৪৫ জন কর্মীর কাছ থেকে ৪৭.৬৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মুহাম্মদ মজিবুল হক রুবেল, তার স্ত্রী কামরুন নাহার হীরামনি
দি ইফতী ওভারসিজ:
৩,৭৯৭ জন কর্মীর কাছ থেকে ৬৩.৫৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ
মালিক: মো. রুবেল, বোরহান উদ্দিন পান্না
দুদক জানিয়েছে, এসব রিক্রুটিং এজেন্সি নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আদায় করে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মামলার তদন্ত চলছে, এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।