ঢাকা ১১:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলামে ব্যভিচার ও ধর্ষণের শাস্তি: বিধান ও প্রতিকার

মোঃ মনিরুল ইসলাম
  • আপডেট সময় : ১১:০৩:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫ ৪৪ বার পড়া হয়েছে

ইসলামে ব্যভিচার ও ধর্ষণের শাস্তি

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইসলামে ব্যভিচারকে অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণিত অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি সমাজের নৈতিকতা ধ্বংস করে এবং পারিবারিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করে। এ কারণে ইসলামে ব্যভিচারের জন্য পার্থিব ও অপার্থিব উভয় ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী—তাদের প্রত্যেককে ১০০ বেত্রাঘাত করবে…” (সুরা নুর: ২)। ইসলামী শরিয়তে ব্যভিচারের শাস্তি বিবাহিত ও অবিবাহিত ব্যক্তির জন্য পৃথকভাবে নির্ধারিত হয়েছে। বিবাহিত হলে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড (রজম) এবং অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত করার বিধান রয়েছে। তবে এই শাস্তি প্রয়োগের দায়িত্ব কেবল ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার ও প্রশাসনের। যদি এ শাস্তি কার্যকর না হয়, তাহলে দুনিয়াতেই কোনো না কোনোভাবে তার পরিণতি এসে যায়।

হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ব্যভিচারের কুফল ছয়টি। দুনিয়ায় এর ফলে চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হয়, দারিদ্রতা আসে এবং অকালমৃত্যু ঘটে। পরকালে আল্লাহর অসন্তুষ্টি, কঠিন হিসাব-নিকাশ এবং জাহান্নামের কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে।

ব্যভিচারের চেয়েও ভয়ংকর অপরাধ হলো ধর্ষণ। এটি নৈতিক অবক্ষয়ের চরম রূপ, যেখানে বল প্রয়োগ করে কারো সম্ভ্রম লুণ্ঠন করা হয়। ধর্ষণের শিকার হলে প্রতিরোধ করা ইসলামসম্মত। আত্মরক্ষার্থে আক্রমণকারীকে প্রতিহত করা বৈধ, এমনকি যদি এতে সে নিহত হয়, তবে সে শহীদের মর্যাদা পাবে।

ইসলাম ধর্ষিতাকে কখনো অপরাধী মনে করে না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “বল প্রয়োগ, ভুলবশত করা অপরাধ ও ভুলে যাওয়া কাজ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২০৪৫)

ধর্ষণ (প্রতীকী ছবি)
ধর্ষণ (প্রতীকী ছবি)

ধর্ষণের শাস্তি ইসলামী শরিয়তে ব্যভিচারের মতোই কঠোর। যদি ধর্ষক বিবাহিত হয়, তবে তাকে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। ইমাম মালেক (রহ.)-এর মতে, ধর্ষণ ব্যভিচারের পাশাপাশি মুহারাবার শাস্তির অন্তর্ভুক্ত। কোরআনে বলা হয়েছে, যারা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করে, তাদের হত্যা করা হবে, শূলে চড়ানো হবে, হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে বা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে (সুরা মায়িদা: ৩৩)।

যদি ধর্ষণের সঙ্গে হত্যার ঘটনাও ঘটে, তাহলে ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

শুধু আইন প্রয়োগ করে ব্যভিচার ও ধর্ষণ নির্মূল করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা, আত্মশুদ্ধি, খোদাভীতি এবং তাকওয়াভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। পরিবার ও সমাজের দায়িত্বশীল ভূমিকা অপরিহার্য। নারীর সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। আইনের কঠোরতা অপরাধ দমনের একটি উপায় হলেও, প্রকৃত সমাধান হলো সমাজের নৈতিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধার করা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ইসলামে ব্যভিচার ও ধর্ষণের শাস্তি: বিধান ও প্রতিকার

আপডেট সময় : ১১:০৩:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

ইসলামে ব্যভিচারকে অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণিত অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি সমাজের নৈতিকতা ধ্বংস করে এবং পারিবারিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করে। এ কারণে ইসলামে ব্যভিচারের জন্য পার্থিব ও অপার্থিব উভয় ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী—তাদের প্রত্যেককে ১০০ বেত্রাঘাত করবে…” (সুরা নুর: ২)। ইসলামী শরিয়তে ব্যভিচারের শাস্তি বিবাহিত ও অবিবাহিত ব্যক্তির জন্য পৃথকভাবে নির্ধারিত হয়েছে। বিবাহিত হলে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড (রজম) এবং অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত করার বিধান রয়েছে। তবে এই শাস্তি প্রয়োগের দায়িত্ব কেবল ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার ও প্রশাসনের। যদি এ শাস্তি কার্যকর না হয়, তাহলে দুনিয়াতেই কোনো না কোনোভাবে তার পরিণতি এসে যায়।

হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ব্যভিচারের কুফল ছয়টি। দুনিয়ায় এর ফলে চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হয়, দারিদ্রতা আসে এবং অকালমৃত্যু ঘটে। পরকালে আল্লাহর অসন্তুষ্টি, কঠিন হিসাব-নিকাশ এবং জাহান্নামের কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে।

ব্যভিচারের চেয়েও ভয়ংকর অপরাধ হলো ধর্ষণ। এটি নৈতিক অবক্ষয়ের চরম রূপ, যেখানে বল প্রয়োগ করে কারো সম্ভ্রম লুণ্ঠন করা হয়। ধর্ষণের শিকার হলে প্রতিরোধ করা ইসলামসম্মত। আত্মরক্ষার্থে আক্রমণকারীকে প্রতিহত করা বৈধ, এমনকি যদি এতে সে নিহত হয়, তবে সে শহীদের মর্যাদা পাবে।

ইসলাম ধর্ষিতাকে কখনো অপরাধী মনে করে না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “বল প্রয়োগ, ভুলবশত করা অপরাধ ও ভুলে যাওয়া কাজ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২০৪৫)

ধর্ষণ (প্রতীকী ছবি)
ধর্ষণ (প্রতীকী ছবি)

ধর্ষণের শাস্তি ইসলামী শরিয়তে ব্যভিচারের মতোই কঠোর। যদি ধর্ষক বিবাহিত হয়, তবে তাকে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। ইমাম মালেক (রহ.)-এর মতে, ধর্ষণ ব্যভিচারের পাশাপাশি মুহারাবার শাস্তির অন্তর্ভুক্ত। কোরআনে বলা হয়েছে, যারা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করে, তাদের হত্যা করা হবে, শূলে চড়ানো হবে, হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে বা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে (সুরা মায়িদা: ৩৩)।

যদি ধর্ষণের সঙ্গে হত্যার ঘটনাও ঘটে, তাহলে ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

শুধু আইন প্রয়োগ করে ব্যভিচার ও ধর্ষণ নির্মূল করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা, আত্মশুদ্ধি, খোদাভীতি এবং তাকওয়াভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। পরিবার ও সমাজের দায়িত্বশীল ভূমিকা অপরিহার্য। নারীর সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। আইনের কঠোরতা অপরাধ দমনের একটি উপায় হলেও, প্রকৃত সমাধান হলো সমাজের নৈতিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধার করা।