পবিপ্রবিতে অনুমোদনহীন নিয়োগের পাঁয়তারা, প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসন
নেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের(ইউজিসি) অনুমোদন তবু্ও বিতর্কিত নিয়োগের পথেই হাঁটছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(পবিপ্রবি) প্রশাসন। ইউজিসির নিয়মকে তোয়াক্কা না করেই বিশ্ববিদ্যালয়টির পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি এ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
এর আগে ২০২২ সালের ২৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে প্রভাষক নিয়োগের এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসির অনুমোদন না নিয়ে পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি এ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগে প্রভাষক পদে প্রার্থীদের আবেদন চাইলে সমালোচনার মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সমালোচনার জের ধরে নানা চাপে উক্ত পদের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন।
নানা বিতর্ক থাকলেও নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করেই সাম্প্রতিক অনুমোদনহীন এই পদের জন্য ভাইভা কার্ড প্রদান করেছে পবিপ্রবি প্রশাসন।
নিয়োগ স্থগিত করেও ফের অনুমোদনহীন পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে প্রশাসনের এমন তোড়জোড়কে বিতর্কিত কর্মকান্ড হিসেবেই বিবেচনা করছেন সচেতন মহল।
গুঞ্জন উঠেছে উল্লেখিত পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতির স্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যেই ইউজিসির নিয়মকে তোয়াক্কা করছেন না প্রশাসন।
ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সুযোগ থাকলেও নির্দিষ্ট প্রার্থীকে সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে সেই নীতিতে হাঁটেনি প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরা। নিয়ম মেনে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীকে সুবিধা দিতে পারবেনা বলেই এমন সিদ্বান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রসঙ্গতঃ ২০২৩ সালে প্রকাশিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণের নীতিমালা অনুসারে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে প্রার্থীকে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই শিক্ষাবর্ষের সর্বোচ্চ ফলাফলধারী শতকরা ৭ জনের মধ্যে থাকতে হবে। প্রশাসনের তথাকথিত কাঙ্ক্ষিত প্রার্থী মেধাক্রমে শতকরা ৭জনের মধ্যে নেই বলে প্রশাসন এমন বিতর্কিত নিয়োগের আশ্রয় নিচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তাছাড়া প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনুষদীয় ডিন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মতামত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয় উক্ত নীতিমালায়। কিন্ত এ নিয়োগের ক্ষেত্রে উক্ত বিভাগ সংশ্লিষ্ট কারো মতামত নেওয়া হয়নি বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ জানান, “প্রশাসনের অনুমোদনহীন নিয়োগের বিষয়টি আমরা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় উত্থাপন করবো, সকলের মতামতের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে আমরা পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করবো।”
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার(অ.দা.) অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু সাংবাদিকদের জানান, “উক্ত বিভাগে কেবল একজন শিক্ষক রয়েছেন, একজনের মাধ্যমে অনুষদের ১৮ ক্রেডিট কোর্স সম্পন্ন করা কিছুটা দুরূহ। প্রশাসন এ জটিলতা কাটানোর চেষ্টা করছে। তবে নিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণ নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে।”তবে ইউজিসির অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও এ নিয়োগের কোন বৈধতা আছে কি না? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের(ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “উক্ত বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন আছে কি না সেটি আমার জানা নেই, তবে আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিব।”