নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ১৬ দিনব্যাপী পক্ষকাল উদযাপন ও উন্নয়ন অগ্রপথিক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ১৬ দিনব্যাপী পক্ষকাল উদযাপন ও উন্নয়ন অগ্রপথিক সম্মাননা প্রদান উপলক্ষে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা পুষ্ট প্রকল্পটির উদযাপন করা হয়। শনিবার ২ ডিসেম্বর ঢাকার একটি হোটেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ক্রিশ্চিয়ান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন। তিনি বলেন,এখনো আমরা দেখি দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে বসে সমাজের অনেক মানুষ চা খেতে দ্বিধাবোধ করে । পিছিয়ে পড়া মানুষদের আজকের সমাজে কোন সম্মানজনক অবস্থান নেই। আসার কথা এই যে, এই অবস্থার আস্তে আস্তে পরিবর্তন ঘটছে এবং সেজন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক বুড়োর মহাপরিচালক শেখ মোঃ মনিরুজ্জামান গ্রেড-১)। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক ডক্টর মোঃ মোক্তার হোসেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (গভর্নেন্স এন্ড রাইটস) লায়লা জেসমিন বানু, ক্রিশ্চিয়ান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুসহাত জাবিন এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।
অনুষ্ঠানটিতে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সক্রিয় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে দলিত ট্রান্স জেন্ডার ও হিজড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত প্রতিনিধিগণ অংশ নেন যারা উন্নয়নের অগ্রগতিক হিসেবে বিগত প্রায় তিন বছর ধরে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতকরণে নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রকল্প থেকে নানা প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজেদের জীবনের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন এবং কমিউনিটির অন্যান্যদের মাঝেও এই সকল তথ্য প্রচার করেছেন এমন ১৩ জন গুড উইল আম্বাসেডর কে অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে সম্মাননা জানানো হয়। সেইসাথে বিভিন্ন পেশা যেমন সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন,চেইঞ্জ এজেন্ট,এডভোকেট সি নেটওয়ার্ক মেম্বার:কাউকে বাদ দিয়ে নয় (এলওনবি) কোয়ালিশন, স্থানীয় নেতা থেকে আশা ১৫ জন ব্যক্তিকেও প্রকল্পের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সম্মানিত করা হয়।
সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক ডঃ মোঃ মোক্তার হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি অনেক আন্তরিক এবং তাদের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান করছে। তিনি আরো বলেন সরকার হিজড়াদের উন্নয়নে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে এছাড়া ট্রান্স জেন্ডার ও হিজড়া সম্প্রদায় কে ওয়ান স্টপ সেবা প্রদানের জন্য একটি নতুন প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে সরকার।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের গভর্নেন্স এন্ড রাইটস উইংয়ের প্রোগ্রাম ম্যানেজার লায়লা জেসমিন বানু তার বক্তব্যে বলেন, সবাই মূল্যায়িত হতে চায় এবং মূল্যায়ন পেলে কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। তিনি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক বুড়োর মহাপরিচালক শেখ মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট নাগরিক হতে হবে কারণ হিসেবে তিনি বলেন আর কিছুদিন পরেই ক্যাশলেস ট্রানজেকশন শুরু হবে এবং এখন অধিকাংশ লেনদেন অনলাইনে হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন । স্মার্ট না হলে প্রযুক্তির এসব সুবিধা গ্রহণ করা কঠিন হবে ।এজন্য নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী এই সুন্দর আয়োজনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সামাজিক বৈষম্য নিরসনে আমাদেরকে অনেক দূর যেতে হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সর্বোপরি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং আয়োজকদের প্রতি আবারো ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করেন।
উল্লেখ্য জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা সকল সমাজে বিদ্যমান একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা ।এবং অর্থনৈতিক অবস্থা, শ্রেণী সংস্কৃতি কিংবা অন্য যেকোনো বৈচিত্র নির্বিশেষে এর শিকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। এ ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়া অনেক নারী ঘরে, সমাজে এবং কর্মস্থলে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন বা হয়েছেন। নারীর প্রতি সহিংসতা বাল্যবিবাহ যৌন হয়রানি ও নির্যাতন চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যর মতো জেন্ডার ভিত্তিক অসামতা গুলো নারীর ক্ষমতায়নকে বাধাগ্রস্থ করছে। সামাজিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রেও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নারীদের কণ্ঠস্বর অত্যন্ত ক্ষীণ।
এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ(ইএলএমসি)’প্রকল্পটি এবছর জেন্ডার সমতা ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক পরিবর্তন তড়ান্নিতকরণে অবদান রেখেছেন এমন বেশ কয়েকজন প্রকল্প অংশীজনকে অনুষ্ঠানে’ চ্যাম্পিয়ন এবং গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
২০২১ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চলমান এই প্রকল্পটি যৌথ ভাবে বাস্তবায়ন করছে ক্রিশ্চিয়ান এইড, নাগরিক উদ্যোগ, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ওয়েভ ফাউন্ডেশন এবং ব্লাস্ট। প্রকল্পটি দলিত সম্প্রদায়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি তাদেরকে সরকারি সেবা সমূহে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি স্থানীয় নাগরিক সংগঠন এবং কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠনসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে থাকে।
দলিত সম্প্রদায়, ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী থেকে আগত অতিথিরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।