আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে জাতীয় যুব সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে; ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না।”
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, আমার যে ভাইগুলো শহীদ হয়েছিল, রক্ত দিয়েছিল সংস্কারের জন্য, তাহলে কবরে গিয়ে তাদের লাশ ফেরত দিতে হবে এই সরকারকে।
“আমার যে ভাইয়ের হাতটা চলে গিয়েছিল, যদি সংস্কার কাজ শেষ না করে নির্বাচন হয়, তাহলে এই সরকারকে আমার ভাইয়ের হাতটা ফিরিয়ে দিতে হবে। যে মায়ের বুক খালি হয়েছিল, সেই মায়ের বুকের সন্তানকে ফেরত দিতে হবে।”
যুব সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বক্তব্য দেন।
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছর রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। নির্বাচন কমিশনও ফেব্রুয়ারিতে ভোট করাতে এর দুই মাস আগে সূচি ঘোষণার কথা বলেছে।
দ্রুত নির্বাচনের দাবি করে আসা বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। পরে জামায়াতও ফেব্রুয়ারির ভোট নিয়ে তাদের আপত্তি না থাকার কথা জানিয়েছে।
তবে সংস্কার ও অভ্যুত্থান ঠেকানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বিচার না হওয়ার আগে নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। অভ্যুত্থানের নেতাদের নিয়ে গঠিত দলটি নির্বাচনের আগে এ দুই দাবির বাস্তবায়ন চেয়ে আসছে।
মঙ্গলবারের যুব সম্মেলনে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন আবারও নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র সংস্কার ও অভ্যুত্থানের সময়কার ঘটনায় বিচারের কথা বলেন।
একই ধরনের সংস্কৃতিতে নির্বাচন হলে মানুষ কেন আহত-নিহত হল সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “একই সংস্কৃতির ডামাডোলে, একই ফ্যাসিবাদী সংবিধানে, একই সিস্টেমের মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। তাহলে এতগুলো মানুষ শহীদ হওয়ার প্রয়োজন কি ছিল? এতগুলো মানুষ আহত হওয়ার প্রয়োজন কি ছিল?”
সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “গণমাধ্যম আগে ছিল ‘হাসিনামাধ্যম’, এখন কি মাধ্যম সেটা বললে চাকরি থাকবে না। গণ-অভ্যুত্থানের পরে সকল মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে বসেছিলাম, তাদেরকে একটা কথা বলেছিলাম; যা কাম করেছেন, ঘরের ভিতরে বসে থাকুন।
“যদি লজ্জা থাকে, ঘরের ভিতর থেকে বের হবেন না। কিন্তু তাদের লজ্জা নেই। তারা বারবার বাংলাদেশের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে।”
আয়নাঘর ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাজের সমালোচনা করে নাসীরুদ্দীন বলেন, “একটা গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশে; ডিজিএফআই আপনার আমার পকেটের টাকায় চলাফেরা করে। তারা কত টাকা খরচ করে বাংলাদেশবাসী জানতে পারবে না। তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই, জবাবদিহিতা নেই, স্বচ্ছতা নেই।
“তাদের একটাই কাজ, মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করা; কিছু হলে আয়নাঘরে তুলে নিয়ে আসবে। আপনার আয়নাঘর আমরা ভেঙে দিয়েছি।
“সামনে যদি একই ধরনের প্রচেষ্টা করা হয়, আমরা আয়নাঘর কেন, ডিজিএফআইয়ের সদর দপ্তরও ভেঙে দেব। যথেষ্ট সহ্য করেছি। বাংলাদেশ যদি ডিজিএফআই থাকতে হয়, অবশ্যই এর সংস্কার করতে হবে।”
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও জাতীয় যুবশক্তির সদস্য সচিব জাহেদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
প্রকাশক: মো. আরমান শরীফ
সম্পাদক: জিললুর রহমান চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ মনিরুল ইসলাম
অফিস: বাসা: ২৭, রোড: ৭/ডি, সেক্টর :৯, উত্তরা মডেল টাউন
ই-মেইল: octopusy2816@gmail.com