গত, ২১ জুলাই ২০২৫, আবারও আমরা একটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার করুণ চিত্র দেখলাম। উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের পাশে চীনের F-7 যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা গেছে অনেক শিশু। শতাধিক শিশু বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
তাহলে প্রশ্ন হলো — এই যুদ্ধবিমানটি আসলে কী?
F-7 যুদ্ধবিমান কী?
F-7 হলো চীনের তৈরি একটি যুদ্ধবিমান, যা মূলত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের MiG-21 এর অনুকরণে তৈরি। এই বিমান ১৯৬০-এর দশকে ডিজাইন করা হয় এবং ২০০০-এর দশকের পর থেকেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটি "অব্যবহারযোগ্য" বা "obsolete" বলে বিবেচিত।
**কেন এবং কিভাবে বাংলাদেশে এল?
২০১৩ সালে বাংলাদেশ চীন থেকে ১৬টি F-7BGI যুদ্ধবিমান কিনে।
মূল্য: আনুমানিক ১,৮৮৩ কোটি টাকা (১৮.৮৩ বিলিয়ন টাকা), যদিও প্রকৃত মূল্য এবং চুক্তি সংক্রান্ত অনেক তথ্য গোপন রাখা হয়েছে।
বিমান সরবরাহের পরপরই চীন F-7 সিরিজের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়, যা এই সিরিজের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার উপর বড় প্রশ্ন তুলে দেয়।
**বিধ্বস্তের ইতিহাস:
F-7 যুদ্ধবিমান এর আগে বহু দেশে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে:
পাকিস্তান, ইরান, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, চীন এমনকি বাংলাদেশেও এই বিমানের ভয়াবহ দুর্ঘটনার নজির রয়েছে।
***বাংলাদেশে F-7 বিধ্বস্তের কিছু উদাহরণ:
২০১৮: টাঙ্গাইলে মহড়ার সময় F-7 বিধ্বস্ত, মৃত্যু: উইং কমান্ডার দিপু।
২০২১: বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত, মৃত্যু: ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ।
২০২৫: আজকের দিন—উত্তরা, স্কুলের পাশে বিধ্বস্ত। শতাধিক শিশুর জীবন বিপন্ন, অগ্নিকাণ্ডে বহু প্রাণহানি।
* কেন প্রশ্ন উঠছে?
১. এই বিমান কিনে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করা হয়েছে।
২. আগেই জানা ছিল এই বিমানের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা রয়েছে।
৩. F-7 যুদ্ধবিমান বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে "outdated" এবং বেশিরভাগ দেশ এর ব্যবহার বন্ধ করেছে।
৪. সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে কোনো সংস্কার বা জবাবদিহিতা নেই।
৫. দুর্ঘটনার পরও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, তদন্ত হয়না, হয় কেবল লাশের উপর রাজনীতি।
***শিশুরা রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার বলি
আজকের ঘটনায় সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিক হচ্ছে:
বিদ্যালয়ের আইডি কার্ডে বাচ্চাদের রক্তের গ্রুপ বা গার্ডিয়ানের নম্বর ছিল না।
চিকিৎসা দেরিতে শুরু হয়েছে।
রাজনীতিবিদরা ভিআইপি প্রটোকলে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে।
একটি প্রশ্ন রাখি... আমাদের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট যেখানে ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি, সেখানে কেন আমরা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত যুদ্ধবিমান দিয়ে পাইলটদের জীবন এবং সাধারণ জনগণের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছি?
আজকের ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের অভিশাপ, হয়তো এই রাষ্ট্রকে একদিন গিলে খাবে।
বিঃদ্রঃ: যারা মনে করেন এই পোস্ট "রাষ্ট্রবিরোধী", তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই— একজন নাগরিকের জীবনের চেয়ে বড় কোনো রাষ্ট্রের সম্মান হতে পারে না।
প্রকাশক: মো. আরমান শরীফ
সম্পাদক: জিললুর রহমান চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ মনিরুল ইসলাম
অফিস: বাসা: ২৭, রোড: ৭/ডি, সেক্টর :৯, উত্তরা মডেল টাউন
ই-মেইল: octopusy2816@gmail.com