পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বসবাসরত প্রায় আট লাখ শরণার্থীর জন্য কোরবানির মাংস বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে দেড় কেজি করে মাংস বিতরণের লক্ষ্যে ২৩টির বেশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও কোরবানির পশু সংগ্রহ করেছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি)-এর তত্ত্বাবধানে এবং উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ঈদের দিন সকাল থেকে এই মাংস বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতিটি পরিবারে মাংস পৌঁছে দিতে দায়িত্বে থাকবেন মাঝিরা।
আরআরআরসি সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার ২৩টি রোহিঙ্গা শিবিরে ১ হাজার ৭০০টি গরু, ৩৫০টি ছাগল এবং প্রায় ৫০ হাজার কেজি মাংস ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। সুষ্ঠু পরিবেশে বিতরণ নিশ্চিত করতে রয়েছে বিকল্প পরিবহন, সংরক্ষণব্যবস্থা এবং বিশেষ করে সম্ভাব্য বৃষ্টিপাতের বিষয় মাথায় রেখে নির্ধারিত ব্যবস্থা।
উখিয়ার বিপরীতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবিরগুলো এবারও কোরবানির মাংস সহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে। এনজিওগুলোর অনাগ্রহে হতাশ টেকনাফের রোহিঙ্গারা। শালবাগান শিবিরের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি জামাল হোসেন বলেন, “গত বছরও আমরা কোরবানির মাংস পাইনি, এবারও একই চিত্র। আমাদের শিবিরগুলোতে কেউ আসে না।”
তবে টেকনাফ ও হ্নীলা এলাকার কিছু রোহিঙ্গা পরিবার বিদেশে থাকা আত্মীয়দের পাঠানো অর্থে নিজেরাই কোরবানির আয়োজন করছেন। তারা স্থানীয় বাজার থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি গরু ও মহিষ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে।
আরআরআরসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোরবানির দিন স্বাস্থ্যবিধি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও চামড়া সংরক্ষণের বিষয়েও বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়েছে এবং আলাদা করে বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা থাকবে।
রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, ২০২০ সালে শিবিরগুলোতে প্রায় ৫ হাজার কোরবানির পশু বিতরণ করা হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এনজিওগুলোর আগ্রহ হ্রাস পাওয়ায় ও তহবিল সংকটে সহায়তার পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। একাধিক এনজিও প্রতিনিধিরা বলছেন, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর মনোযোগ অন্য সংকটের দিকে চলে যাওয়ায় হ্রাস পেয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্ধারিত বাজেট।
যদিও উখিয়ার শিবিরগুলোতে কিছুটা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, তবুও সমন্বিতভাবে রোহিঙ্গাদের প্রকৃত চাহিদার তুলনায় কোরবানির সহায়তা অনেকটাই কম। বিশেষ করে টেকনাফ অঞ্চলে সহায়তা না পৌঁছানোয় শিবিরগুলোতে ন্যায্য বণ্টন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
একদিকে সীমিত সহায়তা, অন্যদিকে দিন দিন বাড়তে থাকা প্রয়োজন—এই দুইয়ের ব্যবধান ঘোচাতে হলে কেবল এনজিওর নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও নতুন করে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঈদুল আজহার আনন্দ যাতে সবার জন্য সমানভাবে পৌঁছে, সেই প্রত্যাশাই এখন রোহিঙ্গা শিবিরে।
প্রকাশক: মো. আরমান শরীফ
সম্পাদক: জিললুর রহমান চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ মনিরুল ইসলাম
অফিস: বাসা: ২৭, রোড: ৭/ডি, সেক্টর :৯, উত্তরা মডেল টাউন
ই-মেইল: octopusy2816@gmail.com