শরীফ আহমেদ বিশেষ প্রতিবেদনঃ
রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে অনুমোদনহীন নিম্নমানের মশার কয়েল পরিবেশে বিষ ছড়াচ্ছে। এতে শিশুসহ সব বয়সী মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এক শ্রেণির অসাধু ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ী এ অবৈধ মশার কয়েল উৎপাদন ও বাজারজাত করণে জড়িত। কোনো ধরনের বিএসটিআই লাইসেন্স না থাকায় সরকারও কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়ে কারখানা তৈরি করে ক্ষতিকর এ মশার কয়েল উৎপাদন করা হয়। এসব কারখানায় যেকোনো ব্র্যান্ডের মশার কয়েল যে কেউ অর্থের বিনিময়ে তৈরি করে নিচ্ছে। এখান থেকে তৈরি মশার কয়েল দেখতে হুবহু আসল মশার কয়েলের মতো। যা কিনে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী জোটবদ্ধ হয়ে দীর্ঘদিন এসব মশার কয়েল কারখানায় কোনো কেমিস্ট ছাড়াই মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে ভেজাল ও নিম্নমানের মশার কয়েল প্রস্তুত করছে। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে রাজধানী যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল,দক্ষিণ পাড়া,মাতুয়াইল বানিয়াবাগ,ডগাই দরবার শরীফ রোড,বড়ভাঙ্গা,হাজী নগর, পাইটি,ডেমরা, মেরাজনগর,কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জ সানারপাড়, সৈয়দপুর, ফতুল্লা কাশীপুরসহ ঢাকার আশ-পাশের আবাসিক এলাকায় ব্যাঁঙ্গের ছাঁতার মতো গড়ে ওঠেছে এসব অনুমোদনহীন মশার কয়েল কারখানা। এসব কারখানায় নেই কোনো সরকারি অনুমোদন। প্রশাসনের নাকের ডগায় অনেক ক্ষতিকর এ মশার কয়েল কারখানা রয়েছে। অবাক হলেও সত্য এ ব্যাপারে কয়েকটি কারখানার মালিক বলেন, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ না দিলে মশা মরে না। তাই বেশি মাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করতে হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ ও অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েল মানুষ দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার করলে দূষিত ধোঁয়ায় মানবদেহের শ্বাসকষ্ট ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, চোখ জ্বালা-পোড়াসহ ক্যান্সার, কিডনি, লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ৯৫%।এছাড়া গর্ভবতী নারীদের গর্ভস্থ শিশুদেরও বিকলাঙ্গতাসহ মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েলে শুধু ভোক্তা নয় প্রাণিরও ক্ষতি হয়। কারণ বিষাক্ত কয়েলের ছাই পরিবেশে মিশে প্রাণিরাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। অন্যদিকে শিশু ও বয়স্করা বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের মুখে বেশি পড়ছেন এসব ভেজাল ও নিম্নমানের মশার কয়েলর দূষিত ধোঁয়ায়। অন্যদিকে কয়েল উৎপাদন কারখানার শ্রমিকদের ঝুঁকি আরও মারাত্মক। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েলের কাজ মশা তাড়ানো, মশা মেরে ফেলা নয়। অথচ বাজারে এখন এমন কয়েলও পাওয়া যাচ্ছে যাতে মশাই নয়, তেলাপোকা, টিকটিকিও মরে যাচ্ছে। এটা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এ ব্যাপারে বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক বলেন, আমরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছি। শিগগিরই আমরা কিছু অসাধু কয়েল ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করবো। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা মশার কয়েলে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক তিন (০.৩) মাত্রার ‘একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’ ব্যবহার নির্ধারণ করেছে। এ মাত্রা শুধুমাত্র মশা তাড়াতে কার্যকর, মারতে নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনুমোদনহীন ব্যবসায়ী মহলের প্রস্তুত ও বাজারজাতকৃত কয়েলে শুধু মশাই নয়, বিভিন্ন পোঁকামাকড়, তেঁলাপোকা এমনকি টিকটিকি পর্যন্ত মারা যায়! বালাইনাশক অধ্যাদেশ- (পেস্টিসাইড অর্ডিন্যান্স ১৯৭১ ও পেস্টিসাইড রুলস ১৯৮৫) অনুসারে মশার কয়েল উৎপাদন, বাজারজাত ও সংরক্ষণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। অধ্যাদেশ অনুযায়ী- অধিদপ্তরের অনুমোদন পাওয়ার পর পাবলিক হেলথ প্রোডাক্ট (পিএইচপি) নম্বর ও বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়েই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বালাইনাশক পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার কথা। কিছু অসাধু কোম্পানির প্যাকেটের গায়ে কয়েলে ব্যবহৃত কেমিক্যালের পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার নির্দেশিত অনুমোদিত মাত্রার উল্লেখ থাকলেও এসব কয়েলে প্রকৃতপক্ষে কেমিক্যাল অনেক বেশিমাত্রায় ব্যবহার করছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএসটিআইয়ের অনুমতি তালিকার বাইরে বাজারে- ফাইটার কিং,পান্ডা,জাম্বু ফাইটার,সেভেন ভোস্টার ,সুপার ডিসকভারি, প্যাগোডা গোল্ড, তুলসিপাতা, সেফগার্ড, লিজার্ড মেগা, বস সুপার, টাটা হাইস্পিড, মেট্রো, সুপার জাদু, মারুফ পাওয়ার ম্যাজিক, সোলার, মাছরাঙা,ব্ল্যাক কেট, মেঘা, বাংলা কিলার, হান্টার, বিচ্ছু, চমক, সুপার যাদু, রকেট, সুপার যাদু ব্র্যান্ডের কয়েল অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এসব কয়েলের গায়ে ঢাকা, ভৈরব কিংবা চট্টগ্রাম লেখা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কোনো ঠিকানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসিআই ও রেকিট অ্যান্ড বেনকিইজারসহ মশার কয়েল উৎপাদনকারী কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাজারে বেশির ভাগ কয়েলই সঠিক প্রক্রিয়ায় মান নিয়ন্ত্রিত ও অনুমোদিত নয় এবং বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।এ ধরনের মারাত্মক ক্ষতিকর কয়েল উৎপাদন ও বাজারজাত করছে ৫০/৬০টি দেশি বেনামি কারখানা। ভুয়া পিএইচপি নম্বর ও বিএসটিআই’র লোগো ব্যবহার করে আকর্ষণীয় মোড়কে এসব কয়েল বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে উচ্চমাত্রার একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট সম্পন্ন চায়না কয়েল। দেশের বাজার এসব কয়েলে সয়লাব হলেও সংশ্লিষ্টদর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অনুমোদনহীন কয়েলে ‘একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’ (কেমিক্যাল) ও ডিডিটি এ্যানডিন ব্যবহারের ফলে ক্যান্সার, শ্বাসনালীতে প্রদাহসহ বিকলাঙ্গতার মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে। এমনকি গর্ভের শিশুও এসব ক্ষতির শিকার হতে পারে। খাদ্যে ফরমালিন ও পানিতে আর্সেনিকের প্রভাব যেমন দীর্ঘমেয়াদি, তেমনি এসব কয়েলের বিষাক্ত উপাদান মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগের বাসা তৈরি করছে।ডেমরা ডগাই দরবার শরীফ রোডে তোফাজ্জল,খায়ের,সোবহান সহ এদের সবার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালতে মাধ্যমে জরিমানা করে সিলগালা করার পরও,আগের মত অবস্হা ব্যবসা করছে। এরা সবাই অবৈধ গ্যাস নিজ নিজ কারখানায় ব্যবহার করছে।অএ এলাকায় অনুমোদন হীন নিম্নমানের কয়েল কারখানা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।